আব্দুল্লাহ কাসিম আজওয়াদ >>
জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন, পিআর (Proportional Representation) ভিত্তিক নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রবর্তন, গণহত্যার বিচার, ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের নিষিদ্ধকরণ, এবং নির্বাচনে সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করার দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে রাজপথে সরব হয়ে উঠেছে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো।
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) জুমার পর ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি পৃথকভাবে গণমিছিল ও সমাবেশ আয়োজন করে।
জামায়াতের পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ সমাবেশে জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে জোর দেওয়া হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, এবং পরিচালনা করেন ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ড. রেজাউল করিম।
বক্তারা বলেন, ‘বিগত ১৬ বছর দেশে ভোটাধিকার হরণ হয়েছে। এবার জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে।’
সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে গুলিস্তান–পল্টন–কাকরাইল হয়ে বিশাল মিছিল বের হয়।
পিআর পদ্ধতির দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে। জনগণের ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টনই ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছোট ও নতুন দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হলে পিআর ব্যবস্থা ছাড়া বিকল্প নেই।’
সমাবেশে সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, ‘ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া কখনোই শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চায় যেখানে মানুষ ও কুকুর খাদ্যের জন্য লড়াই করবে না, মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব থাকবে না, সবাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে।”
বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ এ সমাবেশে অংশ নেয়।
সনদের আইনি ভিত্তি দিয়েই নির্বাচন: মাওলানা মামুনুল হক
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, ‘দেশ এখন সিদ্ধান্তের মোড়ে— বাহাত্তরের ভেজাল চেতনা নাকি চব্বিশের বৈষম্যবিরোধী চেতনা? আমরা চব্বিশের চেতনার পক্ষে।’
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বাংলাদেশের বাঁচা–মরার প্রশ্ন উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, আমাদের যে সন্তানদের রক্তের উপর ক্ষমতার মসনদে বসে আজও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে পারেননি— লজ্জা হওয়া উচিত আপনাদের।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার তোড়জোড় করছেন, আসন বিন্যস্ত করছেন, কিন্তু শহীদদের রক্তের সম্মান জানানোর রাষ্ট্রীয় নিদর্শন জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এখনো করতে পারেননি।
তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই— জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হবে। এর বিকল্প কোনো চিন্তার সুযোগ বাংলাদেশের মাটিতে নেই।
গণভোট দাবি নেজামে ইসলামের
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বেই গণভোট দিতে হবে। জনগণই নির্ধারণ করবে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ।’
তিনি ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান রোধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেন।
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে: খেলাফত মজলিস
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘অবিলম্বে জুলাই সনদের আইনি ও সাংবিধানিক ভিত্তি প্রদান করতে হবে। জনগণ গণভোট চায়, গণভোটের মাধ্যমেই সনদের বৈধতা দিতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় ধর্মীয় মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। নাচ-গানের শিক্ষক নয়, ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন ও ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সারাদেশে এক সুরে ইসলামি দলগুলো
রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহসহ বিভাগীয় শহরগুলোতেও ইসলামি দলগুলো একই দাবিতে গণমিছিল করে। বক্তারা বলেন, ‘জুলাইয়ের রক্তের চাহিদা ছিল স্বৈরতন্ত্রের চিরস্থায়ী অবসান। পিআর ভিত্তিক নির্বাচনই সেই নিশ্চয়তা দিতে পারে।’
মূল দাবিসমূহ:
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে— জুলাই সনদ, পিআর ভোটব্যবস্থা ও গণভোট এখন ইসলামি রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দুতে। নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হতেই এই দাবিগুলোকেই তারা আগামী রাজনীতির মূল কর্মসূচি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন।
২. নির্বাচন পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে হওয়া।
৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত।
৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করা।
৫. ফ্যাসিবাদ ও জাতীয় পার্টিসহ তার দোসরদের বিচার নিশ্চিত এবং তাদের কার্যক্রম চলাকালীন নিষিদ্ধ করা।
৬. দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
হাআমা/

